স্থানীয় বা দীর্ঘমেয়াদি সম্পদে মূলধন বিনিয়োগের সময় প্রকল্পের লাভজনকতা এবং বিনিয়োগের যোগ্যতা পরিমাপের জন্য যেসব কৌশল অবলম্বন করা হয়, তাই হচ্ছে প্রকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতি বা মূলধন বাজেটিং কৌশল । যেসব কৌশল বা পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে মুনাফা নির্ণয় করা হয়, তা নিচের ছকে উপস্থাপিত হলো-
বিনিয়োগের ভিত্তিতে সম্ভাব্য মুনাফা নির্ণয়ের প্রধান কৌশল দুইটি। যথা:
১. সনাতন কৌশল বা পদ্ধতি;
২. বাট্টাকৃত নগদ প্রবাহ কৌশল বা পদ্ধতি।
নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
ক. সনাতন পদ্ধতি (Traditional method): এ পদ্ধতিকে অবাট্টাকৃত নগদ প্রবাহ পদ্ধতিও বলা হয় । সনাতন পদ্ধতিতে মূলধন বাজেটিং-এর ক্ষেত্রে নগদ প্রবাহ বিবেচনা করা হলেও অর্থের সময়মূল্যকে বিবেচনা করা হয় না। বেশিরভাগ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এ পদ্ধতি দীর্ঘদিন ব্যবহার করে আসছে বলে একে সনাতন পদ্ধতি বলা হয়। এ কৌশলসমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় । যথা :
১. গড় উপার্জন হার (Average Rate of Return)
২. বিনিয়োগ পরিশোধ পদ্ধতি (Pay Back Period )
নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. গড় উপার্জন হার (Average rate of return): সনাতন পদ্ধতির প্রথম কৌশল হলো গড় উপার্জন হার। বার্ষিক গড় নিট মুনাফাকে গড় বিনিযোগ দ্বারা ভাগ করে গড় উপার্জন হার পাওয়া যায়। এটি মূলধন ব্যয়ের তুলনায় বেশি হলে প্রকল্পটি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
২. বিনিয়োগ পরিশোধ পদ্ধতি (Pay back period): এটি সনাতন পদ্ধতির দ্বিতীয় কৌশল। বিনিয়োগ প্রস্তাব মূল্যায়নের জন্য বিনিয়োগ পরিশোধকাল পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। একটি প্রাচীনতম, জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি। এক্ষেত্রে অর্থের সময়মূল্য বিবেচনা করা হয় না।
খ. বাট্টাকৃত নগদ প্রবাহ পদ্ধতি (Discounting cash flow method): যে পদ্ধতিতে সম্ভাব্য সব নগদ প্রবাহ বাট্টা করে বর্তমান মূল্য নির্ণয় করা হয়, তাকে বাট্টাকৃত নগদ প্রবাহ পদ্ধতি বলে। এ কৌশলসমূহকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা :
১। নিট বর্তমান মূল্য (Net Present Value );
২। আন্তঃআয় হার (Internal Rate of Return);
৩। মুনাফা অর্জন সূচক (Profit ability index ) । নিচে
এগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো—
১. নিট বর্তমান মূল্য (Net present value): বাট্টাকৃত নগদ প্রবাহ পদ্ধতির প্রথম কৌশল হলো নিট বর্তমান মূল্য। কোনো প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নগদ আন্তঃপ্রবাহগুলোকে যথাযথ মূলধন ব্যয় দ্বারা বাট্টাকরণের মাধ্যমে মোট বর্তমান মূল্য নির্ণয় করে, তা থেকে প্রারম্ভিক ব্যয় নগদ বহিঃপ্রবাহ বাদ দিলে যে মূল্য থাকে তাকে নিট বর্তমান মূল্য বলে। এ পদ্ধতিতে বিনিয়োগ প্রকল্প যাচাইকালে বাট্টার হার বিবেচনা করা হয়। তাই মূলধন বাজেটিং-এ ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি এটি বলে বিবেচিত হয়।
২. আন্তঃআয় হার পদ্ধতি (Internal rate of return) : বাট্টাকৃত নগদ প্রবাহের দ্বিতীয় কৌশল হলো আন্তঃআয় হার কৌশল । যে বাট্টার হার দিয়ে কোনো প্রকল্পের প্রত্যাশিত নগদ প্রবাহকে বাট্টাকৃত করলে নগদ প্রবাহসমূহের বর্তমান মূল্য প্রকল্পের প্রারম্ভিক বিনিয়োগের সমান হয়, ঐ হারকে আন্তঃআয় হার বা অভ্যন্তরীণ মুনাফার হার বলে।
৩. মুনাফা অর্জন সূচক পদ্ধতি (Profit ability index): এটি বাট্টাকৃত নগদ প্রবাহের তৃতীয় কৌশল। এতে প্রকল্পের নগদ আন্তঃপ্রবাহসমূহকে মূলধন ব্যয়ের হার দ্বারা বাট্টাকৃত করে বর্তমান মূল্যে রূপান্তরিত করে প্রারম্ভিক বিনিয়োগ দ্বারা ভাগ করা হয়। এর ফলে যে অনুপাত পাওয়া যায়, তাকে মুনাফা অর্জন সূচক বলে।